শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অপহরন ঘটনায় কমিউনিটিতে উদ্বেগঃ ৭ বাংলাদেশী আসামীর কাঠগড়ায়

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ২১ জানুয়ারি ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   189 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

অপহরন ঘটনায় কমিউনিটিতে উদ্বেগঃ ৭ বাংলাদেশী আসামীর কাঠগড়ায়

 

নিউইয়র্কের জামাইকায় বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় অপহরণ ঘটনায় কমিউনিটি বিস্মিত ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ ঘটনার সাথে ৭ বাংলাদেশি জড়িত। জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউয়ে সংঘটিত সংঘবদ্ধ দলটির বিরুদ্ধে অপহরণ, দৈহিক নির্যাতন ও অপহৃতদের ওপর যৌন নিপীড়নের অভিযোগ পাওয়া হয়েছে। এতে ১১ জানুয়ারি ব্রুকলিনের একটি ফেডারেল আদালত তাদেকে অভিযুক্ত করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। অভিযুক্ত বাংলাদেশীরা হচ্ছেন সৈয়দ রুবেল আহমেদ (৪৩), শাহেদ আলম (২৯), আবু চৌধুরী (২৮), আনজু খান (২৮), সুলতানা রাজিয়া (৩৮) ও ইফফাত লুবনা (২৪)। এরমধ্যে আবু চৌধুরী ও লুবনা স্বামী-স্ত্রী। অপর এক অভিযুক্ত পলাতক রয়েছেন।

এই সংঘবদ্ধ চক্রটির ২ বাংলাদেশিকে অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনা এখন প্রবাসী বাংলাদেশিদের এখন মুখেমুখে। জামাইকা, জ্যাকসন হাইটস, ব্রংকস ও ব্রুকলিনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় তা টক অব দ্যা কমিউনিটি। জামাইকা এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা নানা আশংকার কথা বলছেন। অপরাধী ৭ জনের ৩ জনই এলাকায় পরিচিত। ছোট ধরনের ব্যবসার সাথেও তারা জড়িত। হিল সাইডের ২০৪ স্ট্রিটে আবু চৌধুরী ও লুবনার একটি গ্রেসারী দোকানও ছিল। তারা এমন জঘন্য ঘটনা ঘটাতে পারে প্রথমে অনেকেই বিশ্বাস করছিলেন না। মূলধারা ও কমিউনিটির মিডিয়ায় তা ফলাও করে আসছে। জামাইকা বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক রাব্বি সৈয়দ আজকালকে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এ ঘটনায় আমরা বিব্রত। কেন এমন ঘটনা ঘটছে তা খুঁজে বের করতে হবে। জামাইকায় ড্রাগ মহামারি আকার ধারন করেছে। তার প্রভাব পড়ছে কমিউনিটির ওপর। ভাবতে অবাক লাগে আমাদের আশেপাশেই হয়তো অপরাধীরা চলাফেরা করছে। কমিউনিটির নেতৃবৃন্দের উচিত ড্রাগ ও অপরাধ বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নেয়া। প্রয়োজনে মানসিক উন্নয়নের জন্য সেমিনার করা যেতে পারে।

কমিউনিটি ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ক্লাবের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আল আমীন রাসেল বসবাস করেন জামাইকায়। তিনি আজকালকে বলেন,কমিউনিটির অনেক লোকজন, বিশেষ করে উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা ছিনতাই ও ড্রাগের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। যে ঘটনা ঘটনাটি ধরা পড়লো তা কমিউনিটির ভাবমূর্তিকে খাটো করলো। আমাদের যারা মূলধারায় কাজ করেন, তাদের উচিত প্রশাসনের সাথে সংলাপের মাধ্যমে কমিউনিটিকে অপরাধ ও ড্রাগের ছবল থেকে উদ্ধার করা। গুরুত্ব দিতে হবে কমিউনিটি পুলিশিং এর উপর।

আইনজীবিরা বলছেন, অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদন্ড হতে পারে। ডিস্ট্রিক্ট জজ নিনা মরিসনের আদালতে পরবর্তী শুনানির জন্য হাজির হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আবু চৌধুরী ২৫০,০০০ ডলার ও তার স্ত্রী ইফফাত লুবনা ১০০,০০০ ডলারের জামিনে রয়েছেন খান ও আলমকে বিনা জামিনে আটক রাখার আদেশ দিয়েছে আদালত। আহমদকে ১ লাখ ডলার এবং রাজিয়াকে ৫০ হাজার ডলারের বন্ডে হোম ডিটেনশনের আদেশ দিয়ে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

গত ১১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ইউনাইটেড ষ্টেটস এটর্নীর অফিসের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অপহরণ ও অপহরণের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে। আবু চৌধুরী ও তার স্ত্রী লুবনার বিরুদ্ধে পৃথক আরেকটি অপহরণের ঘটনার অভিযোগ রয়েছে। ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্কের সরকার পক্ষের আইনজীবী ব্রেয়ন পিস বলেছেন, ২০২৩ সালের ২৭ মার্চ অভিযুক্ত রুবেল আহমেদ, শাহেদ আলম, আবু চৌধুরী, আনজু খান ও সুলতানা রাজিয়া অপর এক বাংলাদেশী ব্যক্তিকে জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউর ১৮১ স্ট্রিটের কাছ থেকে জোরপূর্বক একটি হোন্ডা মিনিভ্যানে তুলে অপহরণ করেন এবং হত্যারও হুমকি দেন। তারা তাকে বেধড়ক মারধর করেন। পরে তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে উলঙ্গ করে তা ক্যামেরায় ধারণ করে ।এসময় অপহৃত ব্যক্তি পানি চাইলে চেতনানাশক মিশ্রিত পানি পান করায়। এতে তিনি চেতনা হারিয়ে ফেলেন। পরের দিন স্থানীয় একটি হাসপাতালে তাকে পাওয়া যায়।

ব্রুকলিনের ফেডারেল কোর্টে গত ১১ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার বিবাদী পক্ষের আইনজীবি সারাহ স্যাকস সুলতানা রাজিয়ার পক্ষে আদালতে শুনানি করেন। তিনি দাবি করেন যে অপহৃত ব্যক্তির হাতে তার মক্কেল গত ৫ বছর ধরে হয়রানির শিকার হয়ে আসছেন। আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে সুলতানা রাজিয়া এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। তার দাবি হচ্ছে যে অপহৃত ব্যক্তি রাজিয়ার চুল ধরে টানছিলেন এবং তিনি আত্মরক্ষার চেষ্টা করছিলেন। অপর ঘটনায় ২০২৩ সালের ১১ মে আবু চৌধুরী ও ইফফাত লুবনা নিউইয়র্ক সিটির উডসাইডের ব্রডওয়ে এভিনিউর ৭২ স্ট্রিটের কাছে অপর এক বাংলাদেশীকে অপহরণ করে।

অপহরণের অভিযোগ এবং আদালতে পেশকৃত আরজি অনুযায়ী ২০২৩ সালের ১১ মে থেকে তিন দিন পর্যন্ত চৌধুরী ও লুবনা জন ডো-১কে (ছদ্মনাম) অপহরণ ও নিপীড়ন করেছিল। জন ডো-২(ছদ্মনাম) উডসাইডের ৭২ স্ট্রিট ও ব্রডওয়ের পাশে এক রেস্টুরেন্টের বাইরে লুবনার সাথে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তখন চৌধুরী জন ডো-২ কে জোর করে একটি মিনিভ্যানে তুলে প্রহার শুরু করেন।
অপহরণের পর চৌধুরী ও লুবনা জন ডো-২কে একটি হোটেলে নিয়ে যায় এবং জন ডো ২ এর ওপর চৌধুরী যৌন নিপীড়ন করেন। এছাড়াও চৌধুরী জন ডো ২ এর পিতার কাছে ফোন করে তার পুত্রের মক্তিপণ হিসেবে ২০ হাজার ডলার দাবি করেন। অভিযুক্তরা তাকে পুলিশের কাছে যাওয়ার ব্যাপারেও সতর্ক করে । অপহরণের তৃতীয় দিনে চৌধুরী জন ডো-২ কে বেঁধে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে ফেলে রেখে যান। জন ডো-২ দাঁত দিয়ে তার বাঁধন কেটে, জানালা ভেঙে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের ৯১১ নম্বরে কল করতে অনুরোধ জানিয়ে নিজেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই মামলাটি পরিচালিত হচ্ছে, অফিস’স জেনারেল ক্রাইম সেকশন কর্তৃক। অ্যাসিস্ট্যান্ট ইউনাইটেড স্টেটস অ্যাটর্নি স্টেফানি পাক এবং প্যারালিগ্যাল এক্সপার্ট ভিনসেন্ট চিয়াপিনি, ক্যাটরিনা বাতিস্থা যৌথভাবে প্রসিকিউশনের দায়িত্বে রয়েছেন।

Facebook Comments Box

Posted ৬:০২ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২১ জানুয়ারি ২০২৪

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com